তবে দুর্ভাগ্য, শেষমেশ মধুর হয়নি শেষটা। বিশাল আয়োজন, মাতামাতি আর উল্লাস সব রয়ে গেছে যেন অতৃপ্তি হয়ে। বলছিলাম চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বছর অনলাইনে ডিগ্রি পাওয়া বাংলাদেশি গ্রাজুয়েটদের কথা, যারা করোনা ভাইরাসের কারণে চীন ছেড়ে বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন।
বড় সেমিনার কক্ষের প্রজেক্টরে নয় বরং ঘরে বসে অনলাইন স্ক্রিনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট মুখের খোপে ১০/১২ মিনিটের থিসিস ডিফেন্স। কারও কারও আধ ঘণ্টার পাওয়ারপয়েন্ট পরিবেশনায় নিজের গবেষণা নিবন্ধ তুলে ধরা আর কারও ক্ষেত্রে হয়তো ঘড়ি ধরে অনলাইন পরীক্ষা।
কোভিড মহামারির কারণে এবার এমনই ছিল চীনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দেশের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি লাভের পূর্ব- চিত্র। এই যেমন বিশ্বের অন্যতম নামকরা সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালের স্নাতকদের জন্য সব কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করেছিল। এমনকি অনলাইনে আয়োজন করেছিল গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানেরও। চীনের অন্যান্য অনেক নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের অনুসরণ করেছিল। একইভাবে বিদায় জানিয়েছিল তাদের নতুন গ্রাজুয়েটদের। এদের মধ্যে জিয়াংসি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করেছিল এক ধরনের ডিজিটাল গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান।
বলাই বাহুল্য, ২০২০ সালে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এমন ডিগ্রী পাওয়ার ঘটনা শিক্ষার্থীরা সারা জীবন মনে রাখবে। চায়না ইয়ুথ ডেইলির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা নতুন শিক্ষার্থীদের ৮৮ দশমিক ৬ শতাংশ ডিজিটালি তাদের স্নাতক হওয়া উদযাপন করেছে।
চীনের প্রথম সারির উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উহান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সারওয়ার। করোনা আক্রান্ত চীনের উহান থেকে এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসায় অনলাইনেই ইতি টানতে হয়েছে দুই বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সের। তিনি জানান, মাস্টার্স থিসিস চূড়ান্তভাবে উপস্থাপনের আগে এখান থেকে সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগের বিষয়টা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এক্ষেত্রে অনলাইনে তাদের সাক্ষাৎ পাওয়াটা যেমন অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ ছিল তেমনি থিসিসের দিকনির্দেশনা নিয়েও মাঝেমধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। ‘এরপরও আগের রাতের পূর্ব-প্রস্তুতিতে শেষ পর্যন্ত সুপারভাইজার আর সবার সহযোগিতায় ভালোয় ভালোয় থিসিস ডিফেন্স করে সফল হয়েছি। যদিও ঘরে বসে অনলাইনে সেটি উপস্থাপনের কারণে সামনাসামনি শিক্ষকদের কোন রেসপন্স না পাওয়ায় একটু বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করেছে,’ বলেন সারওয়ার।
দুই বছর ধরে বিশাল ক্যাম্পাসে সমাবর্তন উৎসবে অংশ নেয়ার অনেক পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে সারওয়ার বলেন, ‘টুপি-গাউন পরে জাঁকজমক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন ছিল। বন্ধুদের সাথে শেষ কিছু স্মরণীয় সময় কাটানো, বিশেষ মুহূর্তের ফটোশুট কিংবা ক্যাম্পাসে শেষ স্মরণীয় কিছু ক্ষণ এসবের কিছুই হয়ে আর উঠলনা এই পরিস্থিতিতে। তাই এ নিয়ে বড় একটা আফসোস রয়েই গেল।”
একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক হয়েছেন সিনান আরেফিন। হুট করে প্রিয় উহান শহর আর ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার বিষয়টা তার জন্য বেশ হতাশার ছিল। বললেন, ‘চীনের সবচেয়ে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বুকে সাকুরা বা চেরি ব্লজম উৎসবে সামিল হওয়া, প্রিয় ইস্ট লেকের অনন্য সূর্যাস্ত উপভোগ, রেগানমিয়ানের স্বাদ (চীনা বিশেষ ধরনের নুডলস) নয়তো সবুজ ঢাকা ক্যাম্পাসে হেঁটে বেড়ানোর প্রশান্তি সবই এখন স্মৃতি।
খুব আপন করে নেয়া এই ক্যাম্পাস থেকে অন্তত সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে মধুর একটি বিদায় নেয়ার ইচ্ছে থাকলেও তা আর হয়ে উঠল না জানিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন সিনান। ‘যেদিন আমাদের চূড়ান্ত থিসিস ডিফেন্স ছিল সেদিন ছিল রোজার সময়। চীনের সময়ে সকাল আটটায় সময়সূচী থাকলেও বাংলাদেশে তখন ভোর ছয়টা। তাই সেহেরির পরপরই বসে গেলাম অনলাইনে থিসিস উপস্থাপনে। বেশ ভালভাবে পাওয়ার পয়েন্টে আমার থিসিস উপস্থাপন করলাম। তবে বিকেলে যখন শিক্ষকেরা আমাদের ফলাফল প্রকাশ করলেন তখন আনন্দের সাথে কাজ করছিল মন খারাপ আর শূন্যতাও।’
প্রতিবছর উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে অন্তত ১০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিলেও এবার সামাজিক দূরত্ব মেনে মোটে ৬০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল বলে জানান তিনি। ‘যেসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করেছেন কেবল তারাই সমাবর্তনের আমেজ পেয়েছেন। তাই আমাদের জন্য এমন সমাবর্তন আর ক্যাম্পাসকে বিদায় না জানাতে পারার ব্যাপারটা বেশ বেদনার,’ যোগ করেন সিনান।
বড় সেমিনার কক্ষের প্রজেক্টরে নয় বরং ঘরে বসে অনলাইন স্ক্রিনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট মুখের খোপে ১০/১২ মিনিটের থিসিস ডিফেন্স। কারও কারও আধ ঘণ্টার পাওয়ারপয়েন্ট পরিবেশনায় নিজের গবেষণা নিবন্ধ তুলে ধরা আর কারও ক্ষেত্রে হয়তো ঘড়ি ধরে অনলাইন পরীক্ষা।
কোভিড মহামারির কারণে এবার এমনই ছিল চীনা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দেশের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি লাভের পূর্ব- চিত্র। এই যেমন বিশ্বের অন্যতম নামকরা সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ২০২০ সালের স্নাতকদের জন্য সব কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করেছিল। এমনকি অনলাইনে আয়োজন করেছিল গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানেরও। চীনের অন্যান্য অনেক নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের অনুসরণ করেছিল। একইভাবে বিদায় জানিয়েছিল তাদের নতুন গ্রাজুয়েটদের। এদের মধ্যে জিয়াংসি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করেছিল এক ধরনের ডিজিটাল গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান।
বলাই বাহুল্য, ২০২০ সালে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে এমন ডিগ্রী পাওয়ার ঘটনা শিক্ষার্থীরা সারা জীবন মনে রাখবে। চায়না ইয়ুথ ডেইলির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা নতুন শিক্ষার্থীদের ৮৮ দশমিক ৬ শতাংশ ডিজিটালি তাদের স্নাতক হওয়া উদযাপন করেছে।
চীনের প্রথম সারির উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উহান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সারওয়ার। করোনা আক্রান্ত চীনের উহান থেকে এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসায় অনলাইনেই ইতি টানতে হয়েছে দুই বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সের। তিনি জানান, মাস্টার্স থিসিস চূড়ান্তভাবে উপস্থাপনের আগে এখান থেকে সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগের বিষয়টা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। এক্ষেত্রে অনলাইনে তাদের সাক্ষাৎ পাওয়াটা যেমন অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ ছিল তেমনি থিসিসের দিকনির্দেশনা নিয়েও মাঝেমধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। ‘এরপরও আগের রাতের পূর্ব-প্রস্তুতিতে শেষ পর্যন্ত সুপারভাইজার আর সবার সহযোগিতায় ভালোয় ভালোয় থিসিস ডিফেন্স করে সফল হয়েছি। যদিও ঘরে বসে অনলাইনে সেটি উপস্থাপনের কারণে সামনাসামনি শিক্ষকদের কোন রেসপন্স না পাওয়ায় একটু বেশি দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করেছে,’ বলেন সারওয়ার।
দুই বছর ধরে বিশাল ক্যাম্পাসে সমাবর্তন উৎসবে অংশ নেয়ার অনেক পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে সারওয়ার বলেন, ‘টুপি-গাউন পরে জাঁকজমক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন ছিল। বন্ধুদের সাথে শেষ কিছু স্মরণীয় সময় কাটানো, বিশেষ মুহূর্তের ফটোশুট কিংবা ক্যাম্পাসে শেষ স্মরণীয় কিছু ক্ষণ এসবের কিছুই হয়ে আর উঠলনা এই পরিস্থিতিতে। তাই এ নিয়ে বড় একটা আফসোস রয়েই গেল।”
একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক হয়েছেন সিনান আরেফিন। হুট করে প্রিয় উহান শহর আর ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার বিষয়টা তার জন্য বেশ হতাশার ছিল। বললেন, ‘চীনের সবচেয়ে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বুকে সাকুরা বা চেরি ব্লজম উৎসবে সামিল হওয়া, প্রিয় ইস্ট লেকের অনন্য সূর্যাস্ত উপভোগ, রেগানমিয়ানের স্বাদ (চীনা বিশেষ ধরনের নুডলস) নয়তো সবুজ ঢাকা ক্যাম্পাসে হেঁটে বেড়ানোর প্রশান্তি সবই এখন স্মৃতি।
খুব আপন করে নেয়া এই ক্যাম্পাস থেকে অন্তত সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে মধুর একটি বিদায় নেয়ার ইচ্ছে থাকলেও তা আর হয়ে উঠল না জানিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন সিনান। ‘যেদিন আমাদের চূড়ান্ত থিসিস ডিফেন্স ছিল সেদিন ছিল রোজার সময়। চীনের সময়ে সকাল আটটায় সময়সূচী থাকলেও বাংলাদেশে তখন ভোর ছয়টা। তাই সেহেরির পরপরই বসে গেলাম অনলাইনে থিসিস উপস্থাপনে। বেশ ভালভাবে পাওয়ার পয়েন্টে আমার থিসিস উপস্থাপন করলাম। তবে বিকেলে যখন শিক্ষকেরা আমাদের ফলাফল প্রকাশ করলেন তখন আনন্দের সাথে কাজ করছিল মন খারাপ আর শূন্যতাও।’
প্রতিবছর উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে অন্তত ১০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিলেও এবার সামাজিক দূরত্ব মেনে মোটে ৬০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল বলে জানান তিনি। ‘যেসব বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করেছেন কেবল তারাই সমাবর্তনের আমেজ পেয়েছেন। তাই আমাদের জন্য এমন সমাবর্তন আর ক্যাম্পাসকে বিদায় না জানাতে পারার ব্যাপারটা বেশ বেদনার,’ যোগ করেন সিনান।
0 Comments